চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, সীতাকুণ্ড
চন্দ্রনাথ পাহাড় (Chandranath Hill) হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান আর সুবিশাল সমুদ্র অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ডকে করেছে অনন্য। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অবস্থান সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বে দিকে। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সায় করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে নিচের গেটের কাছে যাওয়া যায়। তবে পায়ে হেঁটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে হিন্দুদের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনা ও অধিবাসীদের জীবন যাত্রার চিত্র দেখে যেতে পারবেন। এছাড়াও পাহাড়ের একটু গভীরে গেলে চোখে পড়বে জুমক্ষেত এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা ফুলের বাগান। চন্দ্রনাথ পাহাড় চূড়াতেই চন্দ্রনাথ মন্দির (Chandranath Temple) অবস্থিত।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখাঁ যায়। এই ঝর্ণার কাছ থেকে পাহাড়ে উঠার পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটির পুরোটাতেই পাহাড়ে উঠার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা আর বাম পাশের পথটি সম্পূর্নই পাহাড়ি। সাধারণত পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠা তুলনামুলক সহজ আর সিঁড়ির পথে নামাতে সহজ হয়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা ১১৫২ ফুট। হেঁটে উঠতে একটু পরিশ্রমের কাজ হলেও আপনার হাঁটার উপর নির্ভর করবে কতক্ষণ লাগবে। সাধারণত ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত সময় লাগবে আসতে ধীরে উঠলে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরেই চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝামাঝি দূরত্বে এবং চূড়ায় মন্দিরের কাছে ছোট টং দোকান আছে সেগুলিতে হালকা খাবার এবং পূজা দেয়ার উপকরণ পাওয়া যায়, তবে ভালো হয় উঠার সময় সাথে পর্যাপ্ত পানি ও কিছু শুকনো খাবার সাথে রাখলে।
ইতিহাস
রাজমালা অনুসারে প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে গৌরের বিখ্যাত আদিসুরের বংশধর রাজা বিশ্বম্ভর সমুদ্রপথে চন্দ্রনাথে পৌঁছার চেষ্টা করেন। ত্রিপুরার শাসক ধন মানিক্য এ মন্দির থেকে শিবের মূর্তি তার রাজ্যে সরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিভিন্ন তথ্য অনুসারে এখানের ইতিহাস সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য জানা যায়। প্রাচীন নব্যপ্রস্তর যুগে সীতাকুণ্ডে মানুষের বসবাস শুরু হয় বলে ধারনা করা হয়। এখান থেকে আবিষ্কৃত প্রস্তর যুগের আসামিয় জনগোষ্ঠীর হাতিয়ার গুলো তারই স্বাক্ষর বহন করে। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অধীনে ছিল। এর পরের শতাব্দীতে এই অঞ্চলের শাসনভার চলে যায় পাল সম্রাট ধর্মপাল দ্বারা এর হাতে (৭৭০-৮১০ খ্রীঃ)। সোনারগাঁও এর সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ্ (১৩৩৮-১৩৪৯ খ্রীঃ) ১৩৪০ খ্রীষ্টাব্দে এ অঞ্চল অধিগ্রহন করেন। পরবর্তীতে ১৫৩৮ খ্রীষ্টাব্দে সুর বংশের শের শাহ্ সুরির নিকট বাংলার সুলতানি বংশের শেষ সুলতান সুলতান গীয়াস উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ্ পরাজিত হলে হলে এই এলাকা আরাকান রাজ্যের হাতে চলে যায় এবং আরাকানীদের বংশধররা এই অঞ্চল শাসন করতে থাকেন। পরবর্তীতে পর্তুগীজরাও আরাকানীদের শাসনকাজে ভাগ বসায় এবং ১৫৩৮ খ্রী: থেকে ১৬৬৬ খ্রী: পর্যন্ত এই অঞ্চল পর্তুগীজ ও আরাকানী বংশধররা একসাথে শাসন করে। প্রায় ১২৮ বছরের রাজত্ব শেষে ১৬৬৬ খ্রী: মুঘল সেনাপতি বুজরুগ উন্মে খান আরা কানীদের এবং পর্তুগীজদের হটিয়ে এই অঞ্চল দখল করে নেন
চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির দেখতে কিভাবে যাবেন

চন্দ্রনাথ পাহাড় চট্রগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। তাই যে জায়গা থেকেই চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখতে চান আপনাকে প্রথমে সীতাকুণ্ডে আসতে হবে। সীতাকুণ্ড থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে।


নামতে হবে। শ্রেনী ভেদে ট্রেন ভাড়া জন প্রতি ২৬৫-
৮০০ টাকা। ফেনী স্টেশন থেকে ১০-১৫ টাকা রিক্সা/
অটো দিয়ে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে।
সেখান থেকে লোকাল বাসে ৫০-৮০ টাকা ভাড়ায়
সীতাকুন্ড যেতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড
চট্টগ্রাম থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে সীতাকুণ্ডে আসতে ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর বাসে করে যেতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার, এ কে খান মোড় অথবা কদমতলী যেতে হবে। লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন ৪০- ৮০ টাকা ভাড়ায়।
চট্টগ্রাম থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে সীতাকুণ্ডে আসতে ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর বাসে করে যেতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার, এ কে খান মোড় অথবা কদমতলী যেতে হবে। লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন ৪০- ৮০ টাকা ভাড়ায়।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুণ্ডে থাকার জন্য হোটেল সৌদিয়া, সাইমুন আবাসিক সহ সীতাকুণ্ড বাজারে কয়েকটি মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল আছে। হোটেল সৌদিয়ায় বুকিং দিতে ফোন করতে পারেন 01991-787979, 01816-518119 নাম্বারে। এছাড়া এখানে টেলি-কমিউনিকেশনের অধীনস্থ একটি ডাকবাংলো আছে। অনুমতি নিয়ে সেখানে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। ভালো কোথাও থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম অলংকার মোড়ে মোটামুটি মানের ৬০০-১৫০০ টাকায় হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এছাড়া স্টেশন রোড, নিউমার্কেট, জিইসি মোড়ের আশেপাশে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
সীতাকুণ্ডে সাধারণ মানের হোটেলের মধ্যে সৌদিয়া রেস্টুরেন্ট, আপন রেস্টুরেন্ট এবং আল আমিন উল্লেখ্যযোগ্য। তবে ভাল খাবার পরিবেশনায় এখানে আল আমিনের বেশ সুনাম রয়েছে।
সীতাকুন্ডের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
সীতাকুণ্ডে ঘুরে বেড়ানোর জন্যে অনেক জায়গাই আছে। কাছাকাছি হওয়ায় চাইলে দিনে দিনে অনেক গুলো জায়গাই ঘুরে দেখতে পারবেন। এক রাত থেকে দুইদিনের জন্যে ঘুরতে গেলে প্রায় সবগুলো জায়গাই ঘুরে দেখা সম্ভব। আপনার কত সময় আছে, সেই হিসেব করে পরিকল্পনা করে নিতে পারেন কি কি দেখবেন। সীতাকুণ্ডে জনপ্রিয় ভ্রমণ স্পট গুলো হলোঃ
- সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
- গুলিয়াখালি বীচ
- বাঁশবাড়িয়া বীচ
- ঝরঝরি ঝর্ণা
- কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- কমলদহ ঝর্ণা
No comments