দুর্গা সাগর দীঘি


বরিশালের বাবুগঞ্জে দুর্গাসাগর দীঘিটি (Durgasagor Dighi) অবস্থিত। বরিশাল (Barisal) ভায়া বানারীপাড়া নেছারাবাদ সড়কের পাশে এটির অবস্থান। ১৭৮০ খৃষ্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগনার তৎকালীন রাজা শিবনারায়ণ এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনে মাধবপাশায় একটি বৃহৎ দীঘি খনন করেন। তাঁর মা দুর্গাদেবীর নামে দীঘিটির নামকরণ করা হয় দুর্গাগাসাগর। প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিবর্তে দুর্গাসাগর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে জেলা প্রশাসন। দুর্গাসাগর এর তিন দিকে ঘাটলা ও দীঘির ঠিক মাঝখানে ৬০ শতাংশ ভূমির উপর টিলা। দুর্গাসাগরে দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ মাঝখানের এই দ্বীপটির সৌন্দর্য। ২৫০০ হেক্টর আয়তনের দুর্গাসাগর দীঘিকে সাগর হিসেবে কল্পনা করলে, এ টিলাটি যেন একটি দ্বীপ। বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গাসাগরে ঢেউ ওঠে। আর সেসব ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেসে ওঠে পাড়ের বৃক্ষরাজির ছায়া। স্থানীয়ভাবে এটি মাধবপাশা দীঘি (Madhobpasha Dighi) নামেও পরিচিত।

Related image

শীত ও বসন্ত ঋতুর শুকনো মৌসুমে দীঘির পাড় লোকে-লোকারণ্য হয়ে প্রাণবন্ত করে তোলে দিনের পুরোটা সময়। দিঘির চারপাশে বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিনোদনের নতুন মাত্রা খুঁজে পায় ইটের শহরে বাস করা নগরবাসী। আর চিরচেনা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ দিঘি যেন গ্রামীণ নিঃসর্গে নিজেকেনতুন করে খুঁজে পাওয়া। চারপাশে বৃক্ষঘেরা স্বচ্ছ জলের এ দিঘির উত্তর পাশেআছে একটি বাঁধানো বড় ঘাট। দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি বৃক্ষরোপণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়, যা বর্তমানে দিঘিটির শোভা বর্ধন করে চলেছে।

দুর্গাসাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়। পাঁচ প্রজাতির কয়েক হাজার পাখির কলকাকলীতে দীঘিটি শীতকালে মুখরিত থাকে। সরাইল ও বালিহাঁস সহ নানান প্রজাতির পাখি দীঘির মাঝখানে ঢিবিতে আশ্রয় নেয় । সাঁতার কাটে দীঘির স্বচ্ছ, স্ফটিক পানিতে । কখনো বা হালকা শীতের গড়ানো দুপুওে ঝাকঁ বেঁধে ডানা মেলে দেয় আকাশে।
Related image


আড়াই শত বছর আগে খনন করা ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর। দীর্ঘিটি সংস্কার সহ পাড়ে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত রেস্ট হাউস এবং পাখিদের অভয়ারন্য নির্মান ও দীঘিতে যাতায়াতের জন্য বোড সহ ভাসমান ব্রিজ নির্মিত হলে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশ বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটতো এখানে । এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেতো। পাশাপাশি রক্ষা করা সম্ভব হতো এই প্রাচীণ কীর্তি। অদূরেই লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটিও দর্শনীয় স্থান হিসাবে পরিচিত। লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি তিনশত বছরের পুরনো।
Image result for দুর্গাসাগর দিঘী

কিভাবে যাবেন


বাসে বা সড়ক পথে বরিশালঃ

সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল আপনি ৬ থেকে ৮ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন। প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে বেশকিছু বাস বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বেশীরভাগ বাস পাটুরিয়া ঘাট অতিক্রম করে বরিশালে যায় আবার কিছু কিছু বাস মাওয়া ঘাট অতিক্রম করে বরিশালে যায়। ঢাকা থেকে আগত বাসগুলো বরিশালের নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে থেমে থাকে।

Image result for bangladesh busঢাকা থেকে বরিশালে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে আছেঃ

শাকুরা পরিবহন, ফোনঃ ০১১৯০৬৫৮৭৭২
                                   ০১৭২৯৫৫৬৬৭৭
ঈগল পরিবহন, ফোনঃ ০২-৯০০৬৭০০
হানিফ পরিবহন, ফোনঃ ০১৭১৩০৪৯৫৫৯

বাস ভাড়াঃ

এসি বাসের ভাড়াঃ ৭০০/- টাকা
নন এসি বাসের ভাড়াঃ ৫০০/- টাকা
লোকাল বাসের ভাড়াঃ ২৫০ টাকা থেকে ৩০০/- টাকা।

নৌপথে বা লঞ্চে বরিশালঃ

ঢাকা থেকে বরিশাল এর লঞ্চগুলো রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সদর ঘাট থেকে ছাড়ে। এর মধ্যে সুন্দর বন ৭/৮, সুরভী৮, পারাবত ১১, কীর্তনখোলা ১/২ লঞ্চ গুলো ভাল। লঞ্চ গুলো বরিশাল পৌঁছায় ভোর ৫টার দিকে।

লঞ্চ ভাড়াঃ

ডেক ভাড়া ১৫০ টাকা, ডাবল কেবিন ১৬০০, ভিআইপি ৪৫০০।

Image result for bangladesh launchবরিশাল জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিঃমিঃ দূরে এই মধাবপাশা।
বরিশাল থেকে চাখার যাওয়ার পথেই পড়বে দূর্গা সাগর দীঘি।
লঞ্চঘাট থেকে ব্যাটারী চালিত ল্যাগুনা করে চলে যেতে পারেন
দীঘির গেট পর্জন্ত। অথবা চাখার যাওয়ার বাসে উঠে পরলেও
হবে। একদম দীঘির গেটে নামিয়ে দিবে আপনাকে।


কোথায় থাকবেন
পশ্চিমপাড়ে ঘাট সংলগ্ন স্থানে রয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। চাঁদনী রাতে দীঘির পাঁড়ে রাত কাটাতে ইচ্ছা করলে ভ্রমণকারীরা এখানে রাত কাটাতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে বরিশাল ফিরে আসতে পারেন। বরিশালে থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।

হোটেল প্যারাডাইজ টু ইন্টারন্যাশনাল, ফোনঃ +৮৮-০১৭১৭০৭২৬৮৬, +৮৮-০১৭২৪৮৫৩৫৯০
হোটেল গ্র্যান্ড প্লাজা, ফোনঃ +৮৮-০১৭১১৩৫৭৩১৮, +৮৮-০১৯১৭৪৫৮০৮৮
হোটেল এথেনা ইন্টারন্যাশনাল, ফোনঃ +৮৮-০৪৩১-৬৫১০৯, +৮৮-০৪৩১-৬৫২৩৩
হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল, ফোনঃ +৮৮-০১৭১৮৫৮৭৬৯৮




                                               ঘুরতে যেয়ে পদচিহ্ন ছাড়া কিছু ফেলে আসবো না,
                                                ছবি আর স্মৃতি ছাড়া কিছু নিয়ে আসবো না।।

No comments

Powered by Blogger.